কোনো উদ্যোগ শুরুর পর পরই আমরা বিজনেসের প্রসার দেখতে চাই। কিন্তু কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই যদি বিজনেসের প্রসার ঘটাতে চেষ্টা করেন তাহলে বরং হিতে বিপরীত হতে পারে। পরিশ্রমে তৈরি সবকিছু হারানোর ঝুঁকি থেকে যায় যথাযথ পরিকল্পনার না থাকার কারণে।
অনেক উদ্যোক্তাই বিজনেস শুরু করার পর কর্মী নিয়োগ দিতে অনেক দেরি করে থাকে। অনেকে আবার প্রয়োজনের অতিরিক্ত লোক নিয়ে ব্যবসা শুরু করে। আবার অনেকে ব্যবসায় কোনো লাভ শুরুর আগেই পরে কাজে লাগবে ভেবে অপ্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কিনে রাখে। এসব কারণে ব্যবসা শুরুর কয়েক বছরের মধ্যেই অনেক উদ্যোক্তাকেই ব্যবসা ছেড়ে দিতে দেখা যায়।
সিদ্ধান্ত গ্রহণের এসব ভুল এড়িয়ে চলতে ও সঠিক উপায়ে নিজের বিজনেসের প্রসার ঘটাতে নিচের ৫টি টিপস বিবেচনা করুন।
১. বিজনেস কালচার তৈরি করুন
প্রতিটা কোম্পানিরই দরকার নিজস্ব কালচার তৈরি করা। যে কালচার কোম্পানিতে টিমগুলিকে একসাথে ধরে রাখবে। কীভাবে নিজস্ব সংস্কৃতি বা কালচার শুরু করবেন তা বুঝতে না পারলে নিজেকে ও টিমকে এই প্রশ্নগুলি করুন:
• আমাদের কোম্পানি তৈরি করেছি কেন?
• আমরা কেন নিজেদের কাজগুলি করছি?
• আমাদের কোম্পানি কোন নীতিতে বিশ্বাস করে?
• আমাদের মূল্যবোধগুলি কী কী?
• আমাদের কোম্পানি কী অর্জন করতে চায়? কোম্পানির লক্ষ্য কী?
কর্মীরা যখন আপনার কোম্পানির সাথে সংযোগ অনুভব করবে, তারা অনিশ্চয়তা তৈরি হলেও আপনার সঙ্গে থাকবে। ব্র্যান্ড হিসেবে আপনার বিজনেসকে শক্তিশালী করে তুলতে পারলে, তা নতুন কাস্টমারদেরও আকৃষ্ট করবে। তাই আপনার কোম্পানির যে নিজস্বতা তৈরি হয়েছে সব কাজ ও প্রচারে তার ধারাবাহিকতা বজায় রাখুন। ওয়েবসাইট, সোশ্যাল মিডিয়া, মার্কেটিং ম্যাটেরিয়াল সব জায়গাতেই আপনার কোম্পানির কালচারের প্রকাশ একই রাখুন।
২. সঠিক লোককে নিয়োগ দিন
বিজনেসের উন্নতিতে কর্মী নিয়োগের ধাপটি জরুরি ভূমিকা পালন করে। তাই, সময় নিয়ে প্রতিটি পদের জন্য উপযুক্ত লোক খুঁজে বের করুন। কোনো পদে ভুল কর্মী নিয়োগ দিলে তা আপনার ব্যবসার উন্নতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
এ ধরনের ঘটনা এড়াতে চাইলে ব্যবহারিক দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা আছে এমন লোকদের নিয়োগ দিন। কোম্পানির প্রসারের সাথে তারা মানিয়ে নিতে পারবে কিনা সেটিও বিবেচনা করতে হবে। আপনার কোম্পানির লক্ষ্যকে প্রার্থীরা কীভাবে দেখে তা তাদের কাছে জানতে চাইতে পারেন। এতে তারা আপনার টিমের সাথে মানিয়ে নিতে পারবে কিনা তা পরিষ্কার হবে। স্টার্টআপ জীবনের সাথে সবাই খাপ খাইয়ে নিতে পারে না, তাই এমন কর্মী নিয়োগ দিন যারা চ্যালেঞ্জ নিতে আগ্রহী।
৩. সঠিক জায়গায় উদ্ভাবনে মনোযোগ দিন
স্মল বিজনেসের প্রসারের সময়, পণ্যগুলিকে আরো উন্নত করতে কিংবা নতুন পণ্য তৈরিতে অনেক টাকা খরচ করতে ইচ্ছা করবে। এই ইচ্ছার রাশ টানুন। বরং অন্যান্য ক্ষেত্রে নতুন কিছু করার চেষ্টা করুন।
যেমন, যাদের নিয়োগ দিচ্ছেন তাদেরকে কোম্পানির কাজ, নীতি ও পদ্ধতি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা নিতে সাহায্য করুন। এ ব্যাপারে যত সময় দেবেন ততই আপনার ব্যবসা লাভবান হবে। অভিজ্ঞতা ও লক্ষ্য সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা তৈরি হওয়ার কারণে কর্মীরা ভবিষ্যৎ কাজে তুলনামূলক ভাবে সময় নেবে কম।
এছাড়া নতুন কোনো প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করার চেষ্টা করতে পারেন। যা কিনা আপনার সময় ও অর্থ খরচ বাঁচাতে সাহায্য করবে।
বিজনেস স্থিতিশীল হওয়ার পরই নতুন পণ্য বাজারে আনার কথা ভাবুন।
৪. ব্র্যান্ডের সুখ্যাতি গড়ে তুলুন
উদ্যোক্তারা সবসময়ই চান কোম্পানির লোগো, বিজ্ঞাপন, পণ্যের প্যাকেজিং দেখেই যাতে কাস্টমাররা বুঝতে পারে এটি তাদের কোম্পানি। এ কারণেই ব্র্যান্ডের খ্যাতি বাড়ানো দরকার। নাইকির বিখ্যাত “জাস্ট ডু ইট” উক্তিটির কথা ভাবুন। কোনো কাস্টমার এই উক্তিটি শুনলেই বুঝে যায় কার কথা বলা হচ্ছে।
আপনার ছোট বিজনেস সাথে সাথেই নাইকির লেভেলে পৌঁছাতে না পারলেও, কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে আপনি নিজের কোম্পানিকে সুপরিচিত করে তুলতে পারেন। এর সহজ একটি উপায় হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায় নেটওয়ার্কিং শুরু করা। কাস্টমার আপনাকে অনলাইনে যত বেশি দেখবে, আপনার কোম্পানির নামও তারা তত বেশি মনে রাখবে।
৫. বর্তমান কাস্টমারদের কথা ভুলে যাবেন না
অনেক উদ্যোক্তাই বর্তমান কাস্টমারদের তুলনায় নতুন কাস্টমারদের আকৃষ্ট করার দিকে বেশি মনোযোগ দিয়ে থাকেন।
গবেষণায় দেখা গেছে, মাত্র ৬ শতাংশ নতুন উদ্যোক্তা বর্তমান কাস্টমারদের ধরে রাখার দিকে মনোযোগ দেয়। বর্তমান কাস্টমারদের সম্মানিত ও মূল্যবান অনুভব করাতে তারা আপনার কোম্পানির কোন বিষয়গুলি পছন্দ করে, কোন দিকগুলিতে আরো ভালো করা যাবে বলে তারা মনে করে সে সংক্রান্ত সার্ভে করতে পারেন। সার্ভের এই পরামর্শগুলিকে কাজে লাগিয়ে আপনার বিজনেসকে আরো উন্নত করে তুলুন। যেসব কাস্টমার আপনার বিজনেস নিয়ে খুশি, তারাই আপনার পণ্য কিনবে এবং তাদের পরিবার ও বন্ধুদের কাছে আপনার কোম্পানির কথা বলবে।
বিজনেসের প্রসার ঘটানো বেশ আনন্দের বিষয়। তবে বিজনেসের প্রসার ঘটাতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারাবেন না। একটি প্ল্যান বা পরিকল্পনা নিয়ে কাজে নামুন, যাতে কোম্পানির নীতি অনুযায়ী কাজ করা যায়, সবচেয়ে ভালো কর্মীদের ধরে রাখা যায়, বর্তমান কাস্টমারদের সন্তুষ্ট করা যায় ও নতুন কাস্টমারদের আকৃষ্ট করা যায়।
এই সবকিছু মিলেই আপনার বিজনেস সফল হয়ে উঠবে।